--------------------------------------

কম্পোস্ট চা বানানোর জন্য আগে ভালো মানের কম্পোস্ট লাগবে। এবার দেখি ঘরোয়া পদ্ধতিতে কম্পোস্ট বানানোর সহজ উপায়:
🥬 কম্পোস্ট বানানোর ধাপ
- জায়গা বেছে নিন
- উঠোনে, খামারের কোণে বা একটি বড় ড্রামে/পিটে কম্পোস্ট তৈরি করতে পারেন।
- জায়গাটি ছায়াযুক্ত ও জল জমে না এমন হওয়া ভালো।
- উপকরণ সংগ্রহ করুন
- সবুজ পদার্থ (নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ): সবজির খোসা, ফলের খোসা, আগাছা, ঘাস, ডালপালা, রান্নাঘরের জৈব বর্জ্য।
- বাদামি পদার্থ (কার্বন সমৃদ্ধ): শুকনো পাতা, খড়, কাগজ কুচি, কাঠের গুঁড়া, শুকনো ডাল।
- সামান্য গোবর (গরু, ছাগল, মুরগি ইত্যাদির) মাইক্রোব অ্যাক্টিভেটর হিসেবে।
- স্তরে স্তরে সাজান
- নিচে শুকনো পাতা বা খড় দিন।
- তারপর সবুজ বর্জ্য, তার ওপরে বাদামি পদার্থ দিন।
- মাঝে মাঝে সামান্য গোবর বা পুরোনো কম্পোস্ট ছিটিয়ে দিন।
- প্রতিটি স্তরের ওপর অল্প জল ছিটিয়ে ভিজিয়ে রাখুন (কিন্তু কাদা করবেন না)।
- উল্টেপাল্টে দিন
- প্রতি ১০–১৫ দিনে একবার মিশ্রণ উল্টেপাল্টে দিন, যাতে বাতাস ঢোকে আর দ্রুত পচে।
- সময় ও প্রস্তুতি
- সাধারণত ২–৩ মাসে ভালো কম্পোস্ট তৈরি হয়।
- প্রস্তুত কম্পোস্ট হবে কালো/গাঢ় বাদামি রঙের, গুঁড়ো মতো ও মাটির মতো গন্ধযুক্ত।
এবার এই কম্পোস্ট ব্যবহার করে আপনি সহজেই কম্পোস্ট চা বানাতে পারবেন। 🌿

ধাপে ধাপে কম্পোস্ট চা বানানোর পূর্ণ প্রক্রিয়া:
🫖 কম্পোস্ট চা বানানোর পদ্ধতি –
🔹 উপকরণ
- ১ ভাগ ভালোভাবে পচানো কম্পোস্ট
- ৫ ভাগ পরিষ্কার জল (বৃষ্টির জল বা টিউবওয়েলের জল হলে ভালো)
- একটি পরিষ্কার বালতি/ড্রাম
- একটি কাপড়/জাল ছাঁকনি
- নাড়ার জন্য কাঠি বা লাঠি
🔹 ধাপসমূহ
- কম্পোস্ট ভিজিয়ে রাখা
- কম্পোস্ট বালতিতে দিয়ে তার সঙ্গে জল মিশিয়ে নিন (১:৫ অনুপাতে)।
- চাইলে কম্পোস্টটাকে কাপড়ের থলেতে বেঁধে “চায়ের ব্যাগ”-এর মতো ভিজিয়ে রাখতে পারেন।
- ভিজিয়ে রাখা ও নাড়া
- মিশ্রণটিকে ২৪–৪৮ ঘণ্টা ছায়ায় রেখে দিন।
- মাঝে মাঝে কাঠি দিয়ে নাড়বেন, যাতে অক্সিজেন ঢোকে।
- ছেঁকে নেওয়া
- সময় হলে মিশ্রণটি ছেঁকে পরিষ্কার তরল অংশ আলাদা করুন।
- বাকি কঠিন অংশ জমিতে ফের ছড়িয়ে দিতে পারেন।
- ব্যবহার
- গাছের গোড়ায় জল দেওয়ার মতো করে ব্যবহার করুন।
- পাতায় স্প্রে করতে চাইলে ছেঁকে নেওয়া তরল ব্যবহার করুন (পাতায় দাগ পড়বে না)।

🔹 উপকারিতা
- মাটিতে উপকারী অণুজীব যোগ হয় 🌿
- গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে 💪
- গাছ দ্রুত সবল ও সবুজ হয় 🌾
👉 একটা টিপস: কম্পোস্ট চা বানিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো কাজ করে। বেশিদিন রেখে দেবেন না।
শক্তিশালী কম্পোস্ট চা বানানোর প্রক্রিয়া – যেটা বিশেষভাবে পাতায় স্প্রে করার জন্য কার্যকর। এতে গাছ আরও সবল হয়, রোগ কমে, আর দ্রুত ফলন বাড়ে।
🫖 শক্তিশালী কম্পোস্ট চা (অ্যাক্টিভেটেড ভার্সন)
🔹 উপকরণ
- ১ ভাগ ভালোভাবে পচানো কম্পোস্ট
- ৫ ভাগ পরিষ্কার জল
- ২–৩ চামচ গুড়/আখের গুড় (মাইক্রোবদের খাবার হিসেবে)
- সামান্য গোবর বা গোবরের স্লারি (বেশি শক্তি বাড়ায়)
- একটি বালতি/ড্রাম
- নাড়ার জন্য কাঠি বা লাঠি
🔹 ধাপসমূহ
- কম্পোস্ট + জল মিশানো
- কম্পোস্ট বালতিতে দিয়ে জল মেশান (১:৫ অনুপাতে)।
- গুড় মেশানো
- গুড়কে আগে গরম জলে গুলে নিয়ে ঠান্ডা করুন। তারপর কম্পোস্টের মিশ্রণে ঢেলে দিন।
- গুড় মাইক্রোবদের দ্রুত বৃদ্ধি করে।
- গোবর/স্লারি মেশানো
- ১–২ মুঠো শুকনো গোবর বা ১–২ লিটার তরল গোবর স্লারি দিন।
- এটি অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া সরবরাহ করবে।
- ভিজিয়ে রাখা ও নাড়া
- ২৪–৩৬ ঘণ্টা ছায়ায় রেখে দিন।
- মাঝে মাঝে (প্রতি ৪–৫ ঘণ্টায়) নেড়ে দিন, যাতে বাতাস ঢোকে।
- ছেঁকে ব্যবহার করা
- মিশ্রণটি কাপড় বা জাল দিয়ে ছেঁকে নিন।
- তরল অংশটি পাতায় স্প্রে করুন বা গোড়ায় দিন।
🔹 ব্যবহারবিধি
- পাতায় স্প্রে: সকাল বা বিকেলে (রোদ কমে গেলে) স্প্রে করুন।
- গোড়ায় প্রয়োগ: সরাসরি গাছের গোড়ায় জল দেওয়ার মতো করে দিন।
- সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করলে দারুণ ফল পাবেন।
🔹 বিশেষ উপকারিতা
- গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণে বাড়ে 🌿
- পাতার রং ঘন সবুজ হয় 🍃
- শিকড়ের বৃদ্ধি ও ফলন উন্নত হয় 🌾

সাপ্তাহিক ব্যবহার ক্যালেন্ডার –
যেটা বিভিন্ন ফসলের জন্য শক্তিশালী কম্পোস্ট চা (বা সাধারণ কম্পোস্ট চা) ব্যবহার করার সময়সূচি হিসেবে কাজে লাগবে।
📅 সাপ্তাহিক কম্পোস্ট চা ব্যবহার ক্যালেন্ডার
🌾 সবজি ফসল (টমেটো, বেগুন, মরিচ, লাউ, পুঁই ইত্যাদি)
- সোমবার → গাছের গোড়ায় কম্পোস্ট চা দিন।
- বৃহস্পতিবার → পাতায় হালকা স্প্রে করুন।
- (প্রতি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার যথেষ্ট)
🌱 ডাল ও শস্য ফসল (মুগ, সoya, ধান, গম ইত্যাদি)
- মঙ্গলবার → বীজতলায় বা চারা অবস্থায় গোড়ায় দিন।
- শুক্রবার → পাতায় স্প্রে করুন (বিশেষ করে ফুল ফোটার সময়)।
🍌 ফলের গাছ (আম, কলা, পেঁপে, লিচু ইত্যাদি)
- বুধবার → গোড়ায় প্রচুর পরিমাণে কম্পোস্ট চা ঢালুন।
- রবিবার → পাতায় স্প্রে করুন (নতুন পাতা ও কচি ডাল লক্ষ্য করে)।
- (ফল গাছে মাসে ৩–৪ বার দিলেই যথেষ্ট)
🥬 পাতাজাতীয় ফসল (পালং, লালশাক, ধনেপাতা ইত্যাদি)
- প্রতি ৩ দিনে একবার পাতায় হালকা স্প্রে করুন।
- গোড়ায় সপ্তাহে ১ বার দিন।
- (এতে পাতা দ্রুত সবুজ, নরম ও পুষ্টিকর হয়)
🧄 মসলা ফসল (পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ)
- সোমবার → গোড়ায় দিন।
- শুক্রবার → পাতায় হালকা স্প্রে।
- (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে ও কন্দ/গুড়ি মোটা হবে)
⚠️ সতর্কতা:
- স্প্রে সবসময় সকাল সকাল বা বিকেলের পর করবেন (রোদে নয়)।
- বানানো চা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।
- অতিরিক্ত দিলে গাছের ক্ষতি হয় না, তবে নষ্ট কম্পোস্ট চা ব্যবহার করবেন না।